মারমেইড ইকো রিসোর্ট (mermaid eco resort) দেশের জনপ্রিয় ও শান্তিপুর্ণ পরিবেশে কোলাহল মুক্ত রিসোর্ট। ঢাকার বাইরের রিসোর্টগুলোর মধ্যে অন্যতম হল মারমেইড ইকো রিসোর্ট (Mermaid Eco Resort)।
যা পাহাড়ের পাদদেশে সমুদ্রের কোল ঘেষে অবস্থিত। স্বপ্নিল সৌন্দর্যের এক আবাসভূমি মারমেইড ইকো রিসোর্ট।
নির্জন প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে উঠেছে মারমেইড ইকো রিসোর্ট।
কক্সবাজারের পেঁচার দ্বীপে সম্পূর্ণ কোলাহল মুক্ত নির্জন প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে উঠেছে মারমেইড ইকো রিসোর্ট।
এই পেঁচার দ্বীপে কয়েক বছর আগেও কোন স্থাপনা ছিলো না, ছিলো না পর্যটকের আনাগোনা। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের একমাত্র অভন্তরীন বিমান বিমানবন্দর থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরে জেলেদের ছোট্ট একটি গ্রাম এই প্যাঁচার দ্বীপ।
বেশ কিছু দিন পুর্বে এখানে যেতে অনেক কাঠখড় পেড়িয়ে যেতে হতো। এখন দিন বদলে গেছে।
এক পাশে ঝাউবনসমৃদ্ধ সমুদ্রসৈকত, অন্য পাশে সবুজে ঢাকা উঁচু পাহাড়।
তার মধ্যভাগ দিয়ে সুদূর টেকনাফ পর্যন্ত চলে গেছে প্রায় ৮৪ কিলোমিটারের কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়ক।
বিশ্বে সমুদ্রের কোল ঘেষে এত বড় মেরিন ড্রাইভ রোড কমই আছে। এই জন্য বাংলাদেশ গর্ব করতে পারে।
পেঁচার দ্বীপের ঠিক পাশেই রেজুখাল নদী।
এখানেই গড়ে উঠেছে আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন এই রিসোর্টটি। সবচেয়ে চমৎকার বিষয় হলো রিসোর্টটির রয়েছে নিজস্ব সমুদ্র সৈকত।
ইকো ট্যুরিজমের কনসেপ্ট মাথায় রেখে নির্মিত এই রিসোর্ট একবার ঘুরে আসলেই আপনি বুঝতে পারবেন কিভাবে প্রকৃতি আর নান্দনিকতার সাথে আধুনিকতার সম্মিলন ঘটানো হয়েছে।
ইট-পাথরের নাগরিক সভ্যতায় যখন প্রাণ হাঁপিয়ে উঠে, কর্মচঞ্চল জীবনে যখন ক্লান্তিতে মনক বিষণ্ণ হয়ে ওঠে, তখন মন হারাতে চায় দূরে কোথাও পাহাড় আর প্রকৃতির মাঝে নিরিবিলিতে।
প্রিয়জনের সাথে একান্ত সানিধ্যে। তখন মন খোঁজে একন একটি স্থান যেখানে নেই কোনো যান্ত্রিক কোলাহল, নেই কোনো নাগরিক ব্যস্ততা।
শুধু আছে নিবিড় প্রকৃতির সান্নিধ্য, সমুদ্রের মৃদু মন্দ হাওয়ার সাথে অপার নির্জনতার আবেশ। তাই মনকে রিফ্রেশ ও প্রাণবন্ত করে তুলতে ছুটি কাটানোর আর্দশ স্থান হতে পারে মারমেইড ইকো রিসোর্ট।
সেখানে আপনি থাকবেন সম্পূর্ণ কোলাহলমুক্ত। যেখানে থাকবে পাখি কলরব। কেউ ডিসট্রার্ব করতে আসবে না আপনাকে।
অন্তহীন সমুদ্রের সূর্যাস্ত দুচোখ ভরে দেখার পাশাপাশি মজাদার সব সামুদ্রিক খাবার খাওয়ার অভিজ্ঞতা হবে এই রিসোর্টে।
সারি সারি ছোট ছোট কুটির
রাস্তার ওপর থেকে তাকালে গাছপালার আড়ালে চোখে পড়বে ছোট ছোট অনেক কুটির। রিসোর্টের দুই পাশে বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি করা গেইট।
গাড়ি থেকে নেমে একটু দূর হাঁটতেই আপনাকে বরণ করে নেবে একদল স্মার্ট্ কর্মী দল। তারা আপনাকে অভিনন্দন জানাবে বুনো ফুলের গাঁথা মালা আর ওয়েলকাম ড্রিঙ্ক হিসাবে দেওয়া হবে ডাবের পানি।
ডাবের পানি শেষ করতে না করতে বাংলো বরাদ্দের কাজ শেষ হয়ে।
বাংলো গুলোর নাম ভালোভাবে শুনে নিতে হবে কারন একবার শুনে নাম মনে রাখা বেশ জটিল।
এ রিসোর্টটি তৈরির করার সময় পরিবেশের ভারসাম্যের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা হয়েছিল।
থাকার ঘরগুলোর ছাদ-চালা বাঁশ ও ছন দিয়ে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন তা গাছপালাগুলোর উচ্চতাকে ছাড়িয়ে না যায়।
অযত্নে বেড়ে ওঠা লতাগুল্মগুলোও যেন এই রিসোর্টের ভালোবাসার সম্পদ এবং এই প্রতিষ্ঠানটির স্বকীয়তা বজার রাখার উজ্জল চেষ্টা। পরম মমতায় তারা জড়িয়ে রয়েছে সব কুটিরগুলোতে।
বাংলোর জানালা ও দরজাগুলোে অনেকটাই বড় বড়, তাই সুনির্মল বাতাস, বৃষ্টি আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন বাঁধাহীন ভাবে এবং প্রাণভরে।
মারমেইড ইকো রিসোর্টে সাধারণ চার ধরনের বাংলো পাওয়া যায়
১। ওয়ান বেডরুম ওয়াটার বাংলো।
২। ওয়ান বেডরুম বাংলো।
৩। ওয়ান বেডরুম স্টুডিও ভিলা
৪। দুই বেডরুম বিশিষ্ট
সকল রুম গুলিতে এসি এভেলেবল।
এখানের ঘর গুলি দেখলে পল্লী কবি জসিম উদ্দীনের আসমানী কবিতার কথা মনে পড়তেই পারে। বাড়ীতো নয় পাখীর বাসা,ভেন্না পাতার ছানি। একটু খানি বৃষ্টি হলে গড়িয়ে পড়ে পানি।
কিন্তু চিন্তার কোন কারণ নেই। ঘরগুলো (ছোট্ ছোট পাখির নীড়ে মত) বাইরে থেকে দেখতে কুটিরের মত হলেও ভেতরে কতটা আন্তরিকতা, যত্ন আর আধুনিকতা অপেক্ষা করছে আপনার জন্য, সেটি চিন্তারও বাইরে।
ঘরের ভেতরে মোটামুটি আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান। স্নান ঘরটায় ঢুকলে মুহূর্তেই আপনার মন ভালো হয়ে যাবে।
প্লাস্টিকের বোতলে ভর্তি শ্যাম্পুর বদলে কাঁচের পাত্রে ভেষজ উপায়ে বানানো প্রাকৃ্তিক শ্যাম্পু।
সাবান, শ্যাম্পু রাখা হয়েছে নারকেলের লম্বা একটি খোলের মধ্যে।
এখানকার ঘরগুলো নানানরকম প্রাকৃ্তিক ও আধুনিক উপাদান দিয়ে বেশ নান্দনিক ভাবে সাজানো। খোলামেলা পরিবেশের কারণে ঘর থেকেই দেখতে পারবেন অনাবিল সমুদ্রের নীল জলরাশি ও আকাশের মিতালী।
ইয়োগা সেন্টার, স্পা, নৌকা ভ্রমণ, সম্মেলন কক্ষ, প্রেক্ষাগৃহ সব কিছুরই ব্যবস্থা আছে এই পরিবেশ বান্ধব অবকাশ যাপন কেন্দ্রে।
রিসোর্টের নিজস্ব অপূর্ব সুন্দর সমুদ্র সৈকতে নির্জনে সমুদ্র স্নান করতে পারবেন।
মারমেইড ইকো রিসোর্ট(mermaid eco resort) এ রয়েছে দুই ধরনের প্যকেজ অফার
১। ক্যাপল একোমোডেশান প্যাকেজ
২। হ্যানিমুন প্যাকেজ
বিস্তারিত জানতে মারমেইড ইকো রিসোর্ট এর ওয়েব সাইট ভিজিট করতে পারে। ওয়েব সাইটের ঠিকানাঃ http://mermaidecoresort.com
এখানে নেই কোনো নাগরিক কোলাহল, নেই কোন বায়ু দুষণ, নেই কোনো শব্দ দূষণ। এক শান্ত, স্নিগ্ধ সুশীতল নির্মল চারপাশ।
দুপুরের কড়া রোদ মলিন হয়ে এলে কুটিরের সামনে বাঁশে ও বেতের বেঞ্চে গা এলিয়ে বসে ভিটামিন ডি নিতে বেশ আরাম পাবেন। অথবা এ সময়টা বেড়িয়ে পড়তে পারেন নৌকা ভ্রমণে।
বাংলোর সারি আর নারকেল গাছ ছাড়িয়ে অল্প হেঁটে গেলেই রেজু খাল। সেখান থেকে ভেসে যায় সাম্পান।
নৌকা গিয়ে থামবে ওপারে দূরে অজানা চরে। বালুকাবেলায় পা রাখতেই দেখবেন হাজার হাজার লাল কাঁকড়া।
আপনার আগমন টের পেয়ে দেখবেন হুটোপুটি করে কিভাবে ছুটে পালাচ্ছে লাল কাঁকড়া দল। দখিনা বাতাসে ঝাউ বনের দোলা আপনাকে বিমহিত করবে।
নির্জন সৈকতে প্রাণভরে বিশুদ্ধ বায়ু সেবন আর সূর্যাস্ত উপভোগ অনেকটাই আপনার কাছে জীবনের পরম পাওয়া বলে মনে হতে পারে।
ফেরার পর বোট ক্লাবের পাটাতনে বসে উপভোগ করতে পারবেন সামনের সমুদ্র, পূর্ণিমার চাঁদ অথবা লক্ষ কোটি তারার মিতালী।
সান্ধ্য কালীন নীরবতা থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত এক আশ্চর্য মৌনতায় কাটিয়ে দিতে পারবেন এখানে। প্রশান্তিময় এক স্নিগ্ধ অনুভূতি গ্রাস করবে আপনার সর্বাজ্ঞে।
আপনার সময়কে মোহণীয় করতে আলো আধারী পরিবেশ থাকবে ক্যান্ডেল ডিনার। থাকবে বিভিন্ন সামুদ্রিক সুস্বাদু মাছ।
পেতে পারেন জীবনের প্রথম সামুদ্রিক কাঁকড়া খাবার অনুভুতি।
কিভাবে যাবেন মারমেইড ইকো রিসোর্ট এ
ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেভাবে যাবেনঃ
রাজধানী শহর থেকে কক্সবাজার সড়ক, রেল এবং আকাশপথে যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী বাসগুলোর মধ্যে সৌদিয়া, এস আলম মার্সিডিজ বেঞ্জ, গ্রিন লাইন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, এস.আলম পরিবহন, মডার্ন লাইন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
শ্রেণী ভেদে বাসগুলোর প্রতি সীটের ভাড়া ৯০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকার পর্যন্ত।
ট্রেনে কক্সবাজার যাবার সরাসরি কোন ব্যবস্থা না থাকায় ট্রেনে না যাওয়াই ভালো।
তবে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই রাজধানীর সাথে সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
এছাড়া বাংলাদেশ বিমান, নভোএয়ার, ইউ এস বাংলা এবং রিজেন্ট এয়ারওয়েজের বেশকিছু বিমান ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে।
আগে থেকে টিকিট কিনলে অনেক সাশ্রয়ে পাওয়া যায়। আর উড়োজাহাজে গেলে সময় ও ঝক্কিঝামেলা কমে যাবে।
ভ্রমন অনেক আরামদায়ক হবে। টিকিটের মুল্য ৪০০০ টাকা থেকে ১০০০০টাকার মধ্যে।
কক্সবাজার থেকে মারমেইড ইকো রিসোর্ট এ যেভাবে যাবেনঃ
কক্সবাজারের কলাতলী থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় করে যেতে পারেন পেঁচার দ্বীপে। ভাঁড়া পড়বে প্রায় ২০০ টাকা।
এছাড়া কক্সবাজার এয়ারপোর্ট থেকে সিএনজি নিয়ে সরাসরি চলে যেতে পারবেন। সময় লাগবে ২০ মিনিট।
মারমেইড রিসোর্টে থাকার খরচ
থ্রি স্টার হোটেলের যাবতীয় সুবিধা সম্বলিত মারমেইড বিচ রিসোর্টে বিভিন্ন ক্যাটাগরির রুমের ৩০টি কটেজ আছে।
বলে রাখা ভাল ১ কিলোমিটার দূরত্বে একই মালিকানায় মারমেইড বিচ রিসোর্ট এবং মারমেইড ইকো রিসোর্ট নামে দুইটি রিসোর্ট পরিচালিত হচ্ছে।
মারমেইড ইকো রিসোর্টের কটেজের রুম ভাড়া ৪০০ হাজার ৫০০ থেকে শুরু করে ১৮ হাজার ৯০০ টাকা পর্যন্ত।
তবে বছরের বিভিন্ন সময় এখানে ছাড়ের ব্যবস্থা থাকে।
মারমেইড ইকো রিসোর্ট এ খাবার ব্যবস্থা
শেষ কথা, এই রিসোর্টে অতিথিদের জন্য রয়েছে দেশী, বিদেশী ও সামুদ্রিক খাবারের জন্য একটি রেস্টুরেন্ট।
আরো আছে একটি সিজনাল ফ্রুটের জুস বার। যদিও বেশীর ভাগ খাবার দাবার প্যাকেজের আওতাভুক্ত থাকে।
0 comments:
Post a Comment