Saturday, June 27, 2020

শশী লজ কেবল একটি সাধারণ স্থাপনা নয় (Shoshi Lodge)

শশী লজ


নাম শুনে শশী লজকে খুব সাধারণ কোনোকিছু মনে হতেই পারে আপনার। তবে শশী লজ কেবল একটি সাধারণ স্থাপনা নয়, এর সাথে জড়িয়ে আছে অতীত অনেক ইতিহাস।

‘শশী লজ’ (Soshi Lodge) ময়মনসিংহ শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত মহারাজা শশীকান্ত আচার্যের বাড়ির নাম। স্থানীয়ভাবে এটি ময়মনসিংহ রাজবাড়ি নামেও পরিচিত। এ লজের অদূরে ব্রহ্মপুত্র নদ। জমিদার মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য ১৮ শতকের শেষার্ধে ‘ক্রিস্টাল প্যালেস’ নামে এক মনোরম প্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন, যা ‘রংমহল’ নামেও পরিচিত ছিল। ১৮৯৭ সালের ১২ জুন গ্রেট ইন্ডিয়ান ভূমিকম্পে এ প্রাসাদ ধ্বংস হয়ে যায়। ১৯ শতকের একদম শুরুর দিকে মহারাজ সূর্যকান্ত আচার্য একই স্থানে বাইজেন্টাইন ধাঁচের নির্মাণ শৈলীতে শশী লজের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই সূর্যকান্ত আচার্য মত্যুবরণ করেন। নিঃসন্তান সূর্যকান্তের দত্তক পুত্র শশীকান্ত আচার্য ১৯০৫ সালে এ ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ করেন। তাঁর নাম অনুসারে এ ভবনের নামকরণ হয় ‘শশী লজ’। মহারাজ শশীকান্ত ১৯১১ সালে শশী লজের সৌন্দর্যবর্ধনে কিছু সংস্কার কাজ করে এ ভবনকে করে তোলেন অনিন্দ্যসুন্দর।

শশী লজে প্রবেশ করলে প্রথমেই আপনার দৃষ্টি কেড়ে নেবে বিশাল এক শ্বেত মার্বেল পাথরের ভেনাসের পূর্ণাঙ্গ মূর্তি। এছাড়া ভেতরে ১৮টি বিশাল বিশাল ঘর নিয়ে শশী লজ। বারান্দা ও করিডোর নিয়ে ভবনটি ৫০,০০০ বর্গ ফুটের কম হবে না। পুরো ভবনের ফ্লোর মার্বেল পাথর দিয়ে নির্মিত। ছাদে উঠার জন্য একটি কারুকাজ খচিত লোহার প্যাঁচানো সিঁড়ি আছে। পুরো ভবনে রানিং ওয়াটারের লাইন টানা আছে। ভবনের ভেতরে আধুনিক টয়লেটও আছে। ভবনটি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় এর অনেক কিছুই এখনও নষ্ট হয়নি।

পেছনে রয়েছে পাড় বাঁধানো পুকুর। পুকুর পাড়ে হাওয়া খাওয়ার জন্য দ্বিতল ছোট্ট ভবন। পুকুর পাড়েই গোলাকৃতির একটি কাপড় পরিবর্তনের ঘর রয়েছে। লজের চারপাশে এখনও কিছু বিশদাকায় বৃক্ষ কালের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। সেই ১০০ বছরেরও অধিকাল আগের নির্মিত সীমানা প্রাচীর আজও প্রায় অটুট আছে।

ভাবছেন, কীভাবে যাবেন শশী লজে? ঢাকার যেখান থেকে ময়মনসিংহ যাবার বাস পাবেন, সেখান থেকেই বাসে উঠে ময়মনসিংহ শহরে নামবেন। (মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে এনা বাস যায়)। সেখান থেকে যেকোনো রিক্সা বা ইজি বাইকে শশী লজ বা ময়মনসিংহ রাজবাড়ি বলে দরদাম করে ভাড়া ঠিক করবেন। ব্যস, পৌঁছে যাবেন শশী লজে!

0 comments:

Post a Comment